বাদলা রোগ / ই/ Black Quarter/ Quarter ill

বাদলা রোগ কি ?
বাদলা বা Black Quarter হল ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট প্রধানত বাড়ন্ত বয়সের গবাদি প্রাণির একটি তীব্র সংক্রামক রোগ। বাংলাদেশে পশুর এ রোগ বৃষ্টি বা বাদলা মৌসুমে হয় বলে বাংলায় একে বাদলা রোগ বলা হয়।
প্রচলিত নাম :
কালো রোগ, বাদলা, জহরবাত, সুজওরা, কৃষ্ণাংগ রোগ ।
রোগের কারণ :
ক্লষ্ট্রিডিয়াম শোভিঈ (Clostridium Chauvoei) নামক এক ধরনের গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বাদলা রোগ হয় ।
রোগের বর্ণনা :
বিস্তারঃ
মৃত পশুকে খোলামাঠে ফেলে দিলে মৃত দেহের জীবাণুর স্পোর মাটি ও ঘাসকে দূষিত করে যা প্রাণি বা খাদ্যের মাধ্যমে পুনরায় সুস্থ গরুর দেহে সংক্রমিত হয়।
যে বয়সে হয় :
বিভিন্ন বয়সের গরুতে এ রোগ হওয়ার তথ্য থাকলেও সাধারণত ৬ মাস বয়স থেকে ২ বছর বয়সের গরু অধিক আক্রান্ত হয়।
ঋতু কালীন প্রাদুর্ভাব :
সকল ঋতুতে এ রোগ হলেও বাংলাদেশে বৃষ্টি বা বাদলা মৌসুমে গরুর এ রোগ অধিক হয়। নীচু ও জলাভূমিযুক্ত স্যাঁত সাঁতে স্থানে এ রোগের প্রকোপ বেশী দেখা যায়।
রোগের সংবেদনশীলতা যখন বৃদ্ধি পায়
বাছুরে অধিক প্রোটিনযুক্ত খাদ্য খাওয়ালে রোগের সংবেদনশীলতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
রোগের বর্ণনা :
এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রাণির মাংশ পেশীতে প্রদাহ হয়, গ্যাসপূর্ণ স্ফীতি ঘটে এবং রক্তে বিষক্রিয়া দেখা দেয় । সাধারণত : ৬মাস-২বছর বয়সী হৃষ্টপুষ্ট বাছুর এরোগে আক্রান্ত হলেও কখনও কখনও ১ মাস বয়স থেকেও এই রোগ দ্বারা প্রাণি আক্রান্ত হতে দেখা যায় । নীচু ও জলাভূমি যুক্ত স্যাঁত স্যাঁতে স্থানে এ রোগের প্রকোপ বেশী দেখা যায় ।
রোগের লক্ষণ :
১. অতি তীব্র প্রকৃতির রোগে আক্রান্ত প্রাণি হঠাৎ করে মারা যায়।
২. মৃত্যু আকস্মিক না হলে ক্ষুধামন্দা, জ্বর (১০৪-১০৭ ডিগ্রী ফাঃ), পেঁটে গ্যাস, বিশুষ্ক মাজেল, নাকে শ্লেষ্মা, অবসাদভারা ইত্যাদি উপসর্গ প্রকাশ পায়। উপসর্গ প্রকাশের ১২-৩৬ ঘন্টার মধ্যে পশু মারা যায়।
৩. পায়ের মাংস পেশী আক্রান্ত হয়। ফলে প্রাণি হাঁটতে পারে না এবং খুঁড়িয়ে হাঁটে যা এই রোগের প্রধান উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত। প্রথমে আক্রান্ত প্রাণির পেশী গরম ও ব্যাথাপূর্ণ হয় ফলে প্রাণি খোঁড়ায়।
৪. আক্রান্ত মাংস পেশি কিছু ফোলা থাকে যা টিপলে পচপচ বা পুরপুর শব্দ হয়। পশ্চাৎ পায়ের অংশের মাংস, ঘাড় ও চোয়ালের মাংস পেশী অধিক আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত অংশ কালচে দেখায়।
চিকিৎসা :
১. রোগের উপসর্গ প্রকাশ পাবার সাথে সাথে চিকিৎসা না হলে পরে ঔষুধে কাজ হবে না। সুতরাং বিলম্ব না করে উপসর্গ দেখামাত্রই চিকিৎসা করতে হবে।
২. অ্যান্টিহিস্টাসিনিক জাতীয় ইনজেকশন মাংসে দিতে হবে।
৩. প্রয়োজনে আক্রান্ত ক্ষতস্থান অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে পরিষ্কার করে টিংচার আয়োডিন গজ প্রয়োগ করতে হবে।
প্রতিরোধ :
১. ৬ মাস - ২ বছর বয়সী বাছুরকে ফিডমাষ্টার মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের সিডিউল অনুসারে বাদলা রোগের টিকা প্রদান করতে হবে ।
২. আক্রান্ত প্রাণিকে দ্রুত চিকিৎসা প্রদান এবং সুস্থ পশু হতে আলাদা করে রাখতে হবে।
৩. মৃত প্রাণীকে মাটির নিচে কলিচুন সহযোগে পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে ।
৪. জীবাণুনাশক দিয়ে প্রাণীর আবাসস্থল পরিষ্কার করতে হবে।