ক্ষুরা রোগ / Foot and Mouth Disease (FMD)

ক্ষুরা রোগ কি ?
ক্ষুরা রোগ বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট প্রাণির অত্যন্ত ছোঁয়াচে তীব্র প্রকৃতির ভাইরাস জনিত রোগ। জ্বর, মুখ ও পায়ে ফোসকার স্ফোটক (Vesicular erruption) এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
প্রচলিত নাম :
বাতা, ঝরা,ক্ষুর পাকা, এঁসো, খুরুয়া, তাপা রোগ ইত্যাদি ।
রোগের কারণ :
পিকোর্ণা (Picorna) পরিবারভূক্ত এপথোভাইরাস (Aphthovirus) গোত্রের (FMD) ভাইরাস ক্ষুরা রোগের জন্য দায়ী। এই ভাইরাসের ইমুনোলজিকাল ৭ টি স্ট্রেইন রয়েছে যারা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন নতুন সেট্রইন তৈরী করে।
রোগের লক্ষণ :
১. প্রাথমিক অবস্থায় জ্বর দেখা যায় এবং শরীরের তাপমাত্রা (১০১-১০৭ ডিগ্রী ফাঃ) পর্যন্ত হয়।
২. দাঁতের মাড়িতে, জিহ্বা ও মুখের ভেতরে এবং পায়ের ক্ষুরের মাঝ খানে রসভরা ফোস্কা পড়ে, খাওয়ার সময় ঘষা লেগে ফেটে ঘা বা ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
৩. মুখ দিয়ে প্রচুর পরিমাণে দীর্ঘ রশির মত ঝুলানো লালা পড়ে।
৪. মুখ ও পায়ের ফোস্কা গলে গিয়ে দগদগে ঘা এর মত দেখা যায়।
৫. মুখের ও জিহ্বার ক্ষত ফেটে সাবানের ফেনার মত লালা বের হয়।
৬. পায়ের ক্ষত ফেটে দুর্গন্ধ ছড়ায় ও কষাণি ঝরতে থাকে।
৭. এ রোগে দুধের বাছুর মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত হয় এবং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে মারা যায়।
৮. হালের বলদের কর্মশক্তি কমে যায় এবং গাভীর দুধের পরিমাণ মারাত্মক ভাবে কমে যায়।
চিকিৎসা :
১.ভাইরাস জনিত রোগের কারণে কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে রোগাক্রান্ত প্রাণির সঠিক পরিচর্যা নিলে সুফল পাওয়া যায়।
২.পশুর মুখে ও পায়ে ঘা হলে হালকা গরম পানিতে ফিটকিরি গুঁড়ো করে ১ গ্রাম ১ লিটার পানিতে বা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ১ গ্রাম/১০ লিটার পানিতে- এর যে কোন একটি দ্বারা ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে এবং মুখের ক্ষেত্রে এপথোকেয়ার পাউডার ২৫ গ্রাম করে ৩ বেলা ৫-৭ দিন জিহ্বার উপর লাগিয়ে দিতে হবে এবং পায়ের ঘা ধোয়ার পর পরিষ্কার ন্যাকড়া দিয়ে মুছে ৫০ মিলি তারপিন তেল এর সাথে সমপরিমাণ নারিকেল তেল মিশিয়ে তার সঙ্গে ৫ গ্রাম ভাজা সোহাগার গুঁড়া মিশিয়ে দিনে ৪-৫ বার ব্যবহার করতে হবে।
৩. মৃদু জীবাণু নাশক পদার্থ (PPM 0.01%) দ্বারা মুখের ও পায়ের ক্ষত পরিষ্কার করা ভাল।
৪.পায়ের ক্ষতে সালফানিলামাইড পাউডার লাগানো যেতে পারে। এছাড়াও কস্টিক সোডা ব্যবহার করা যায়।
৫.জীবাণুর জটিলতা রোধে প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দিলে সুফল পাওয়া যায়।
প্রতিরোধ :
১. গ্রামের সকল সুস্থ প্রাণির ক্ষুরা রোগের টিকা দেয়া উচিত।
২. অসুস্থ প্রাণিকে আলাদা রাখা উচিত।
৩. গোয়াল ঘর ও আক্রান্ত প্রাণির ব্যবহৃত দ্রব্যাদি ১-২% সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা ফরমালডিহাইড অথবা ৪% সোডিয়াম কার্বনেট দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
৪. ক্ষুরা রোগে মৃত প্রাণিকে ৬ ফুট মাটির নীচে পুঁড়ে ফেলতে হবে।