দুগ্ধজ্বর/Milk Fever/Parturient Paresis

দুগ্ধজ্বর বা Milk Fever কি ?
মিল্ক ফিভার বা দুগ্ধজ্বর প্রাপ্ত বয়স্ক ডেইরি প্রাণির প্রসবের সাথে সম্পর্কিত একটি বিপাকীয় বিজ্বর (afebrile) রোগ। রোগটিকে দুধ জ্বর বলা হলেও আসলে কোন জ্বর থাকে না বরং তাপমাত্রা কম থাকে।
রোগের কারণ :
প্রধানত রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে দুগ্ধজ্বর হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় গাভীর রক্তে শতকরা ৯-১২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। বাচ্চা প্রসব তথা ওলানে দুধ সৃষ্টির সাথে পশুর রক্তে শতকরা ৫ মিলিগ্রামের নিচে ক্যালসিয়াম নেমে আসলে এ রোগ দেখা দেয়।
ক্যালসিয়াম কমে যাওয়ার কারণ সমূহ :
১. গাভীর পরিপাকতন্ত্র ও অস্থি থেকে রক্তে শোষিত ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ফিটাস ও কলস্ট্রামের চাহিদার পরিমাণ থেকে অধিক কম হলে।
২. খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাতে (২.৩:১) এর ব্যাঘাত ঘটলে এবং ভিটামিন ডি এর অভাব হলে।
৩. অস্থির সঞ্চিত ক্যালসিয়াম দ্রুত ও পর্যাপ্ত হারে বের না হওয়ার কারণে।
রোগের লক্ষণ :
১. প্রথমে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। খুব উত্তেজিত হয়, মাথা ও পা কাঁপতে থাকে। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে চায়। চলতে গেলে টলতে থাকে।
২. আক্রান্ত গাভী বুকে ভর দিয়ে শুয়ে পড়ে।
৩. মাথা বাঁকিয়ে এক পাশে কাঁধে বা বুকের উপর ফেলে রাখে।
৪. শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থেকে ৯৭ ডিগ্রী ফাঃ এর নীচে নেমে আসে, হৃদস্পন্দনের গভীরতা হ্রাস পায়, নাড়ীর গতি বেড়ে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাস ধীর-গভীর ও অনিয়মিত হয়। চোখের তারা প্রসারিত হয় এবং চোখ শুষ্ক ও স্থির দৃষ্টি দেখায়।
৫. সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে ১২-২৪ ঘন্টার মধ্যে গাভী মারা যায়।
৬. প্রসবের পূর্বে এ রোগ হলে বাচ্চা হওয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং বাচ্চা জরায়ুর মাঝে মারা যায়।
চিকিৎসা :
দুগ্ধ জ্বরের মূল কারণ ক্যালসিয়ামের মাত্রা হ্রাস। তাই যত দ্রুত সম্ভব ক্যালসিয়াম বোরোগ্লুকোনেট সলুশন ইনজেকশন দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতি ৪৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ গ্রাম ক্যালসিয়াম আক্রান্ত প্রাণিকে সম্পূর্ণ সুস্থ করতে সক্ষম।
প্রতিরোধ :
১. গর্ভাবস্থার শেষ ৫ সপ্তাহ অল্প মাত্রায় ক্যালসিয়াম যুক্ত খাদ্য ও এসিড প্রকৃতির খাদ্য প্রদান করা উচিত
২. ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড জেল স্টোমাক টিউবের মাধ্যমে ১০০-১৫০ গ্রাম হিসেবে বাচ্চা প্রসবের ২৪ ঘন্টা পূর্বে ১ম মাত্রা, ১-২ ঘন্টা পূর্বে ২য় মাত্রা এবং ১০-১৪ ঘন্টা পরে ৩য় মাত্রা খাওয়ালে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
৩. গাভীকে প্রয়োজন মতো ভিটামিন ডি খাওয়ালে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
৪. গাভী শুষ্ক অবস্থায় দেহ যেন অতিরিক্ত মেদ বহুল না হয় তার ব্যবস্থা করা।
৫. বাচ্চা প্রসবকালীন সময়ে অতিরিক্ত স্ট্রেস (ধকল) না পড়ে তার ব্যবস্থা করা।